চয়ন বিকাশ ভদ্র

    ‘ তুমি আমার পূর্ববাংলা

     একগুচ্ছ স্নিগ্ধ  অন্ধকারের তমাল

    অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায় একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ । ‘

    ছোটবেলায় হালুয়াঘাটে আমার মামার বাড়িতে তমাল গাছ দেখেছি । মামাবাড়ি যে পাড়ায় সেই পাড়ার একটি বাড়িতে রাধা কৃষ্ণের রাসযাত্রা ও রাসপূজা হতো । তাঁরা মামাবাড়ি থেকে তমাল গাছের ডাল কেটে নিয়ে যেতেন পূজার ঘর সাজানোর জন্যে ।

    তমাল গাছ মাঝারি আকারের বৃক্ষ। এটি বনগাব, মহেশকান্ড ইত্যাদি নামেও পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Mottled Ebony । তমাল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Diospyros montana বা Diospyros cordifolia যা Ebenaceae পরিবারভুক্ত। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ক্রান্তীয় অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে জন্মে।বৈষ্ণব কবিতা, লোকগীতিতে তমাল মর্যাদার সঙ্গে আসীন। তমাল গাছের বাকলের রং কালো আর কৃষ্ণের গায়ের রংও কালো, তাই তমাল শ্রী রাধারও প্রিয়।

    ‘ না পুড়াইও রাধার অঙ্গ

    না ভাসাইও জলে ,

    মরিলে বাঁধিয়া রেখো

তমালেরই ডালে ‘

 তমালের কান্ড খাটো, ঘনকালো গিঁটযুক্ত । এর শাখা-প্রশাখা ছড়ানো এবং ছত্রাকৃতি। উদ্ভিদ চিরসবুজ, পত্র ঘন। এর পাতা একান্তর, ৩.৮-১৪ সেন্টিমিটার লম্বা, ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার, পাতার গোড়ার দিকটা গোলাকার। তমালের পুরুষ ফুল ১ সেন্টিমিটার লম্বা, স্ত্রী ফুল ১.৩ সেন্টিমিটার লম্বা, একক। ফল গোলাকার, ২.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা, পাকলে লালচে বাদামি রঙের তমাল ফল বিষাক্ত।  কাঠ লালচে হলুদ, দৃঢ় ।

তমাল গাছ ,ছবিঃ লেখক

তমাল  দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, ক্রান্তীয় অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে জন্মে। ঢাকার  রমনা পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে কয়েকটি অপরিণত গাছ আছে। বেনাপোলের পাঠবাড়ী আশ্রম, ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দজীউ মন্দির, দিনাজপুেরর রাজবাড়ী কালিয়া কান্তজীউ মন্দির প্রাঙ্গণে,  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে, আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনের বাগানে  এবং ময়মনসিংহের কাচিঝুলিতে বনবিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ের উলটো দিকে এবং  ব্রহ্মপুত্র তীরের জয়নুল আবেদীন পার্কের প্রধান ফটকের সামনে তমাল গাছ রয়েছে । তমালের ছবিদুটো ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের জয়নুল আবেদীন পার্কের প্রধান ফটকের সামনে থেকে গত ২৭ মার্চ ‘১৮ তারিখে তুলেছিলাম। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

 তমালের পাতায় যেসব রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে সেগুলো হলো- betulin, diospyrin, epiuvaol, new triterpene characterized as urs-12-en-3α, 28-diol, lupeol, sitosterol, β-sitosterol, stigmasterol and betulic acid BZ¨vw`|    Zgvj d‡j Av‡Q fatty esters of α-amyrin, ursolic, and oleanolic acid, β-sitosterol, lupeol and betulinic acid ইত্যাদি।    তমালের বীজে পাওয়া যায় তেল। এই তেলে আছে palmitic, stearic, oleic Ges linoleic এসিড। এছাড়াও আছে lupeol, β-sitosterol Ges stigmasterol । এর পাতা চুর্ণ মাছের জন্য বিষ। ভেষজ চিকিৎসায় এর নানাবিধ ব্যবহার আছে। জ্বর, ডায়ারিয়া, নিউমোনিয়া, প্রস্রাবে সমস্যা, নিউরালজিয়া, প্লুরিসি, মিনোরেজিয়া, প্রসব পরবর্তী জ্বর, বিষাক্ত মাকড়সার কামড় ইত্যাদিতে তমাল গাছের নানান অংশ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এর ছালের নির্যাসে এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, এন্টি পাইরেটিক গুণ আছে। এর এলকোহলিক নির্যাসে ইঁদুরের ক্যান্সার নিরাময়ের গুণ আছে বলে পরীক্ষায় প্রমান পাওয়া গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here