পৃথিবীতে প্রায় ২,৯৮,০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে কোন কোন উদ্ভিদ অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক। আবার কোন কোন উদ্ভিদ আকারে অনেক বড়, বহুদুর থেকেও এদের পরিষ্কার দেখা যায়। এরা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। কিছু উদ্ভিদ আমাদের পুষ্টি-সমৃদ্ধ ফল দেয়,অত্যন্ত সুদর্শন ফুল দেয়। আবার কিছু উদ্ভিদ ঔষধি গুণের মাধ্যমে আমাদের রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। এত সব উদ্ভিদের মধ্যে কিছু উদ্ভিদ আছে খুবই অদ্ভুত। এদের ঘিরে মানুষের মনে জাগে নানান প্রশ্ন। এদের নিয়ে তৈরি হয় কল্প-বিজ্ঞান। এরকমই কিছু উদ্ভিদের সাথে আমি আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব।
বোটানিক্যাল ফিকশন বা সিনেমায় মানুষখেকো গাছের কথা প্রায়ই শোনা যায়। বাস্তবে এ রকম কোনো গাছ আছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে আমি এমন একটি গাছ দেখেছি, যে কিনা ছোট ছোট কীটপতঙ্গ খেতে পারে। পতঙ্গখেকো উদ্ভিদ সংগত কারণেই প্রকৃতির সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনার গুলোর মধ্যে একটি।এসব উদ্ভিদ সাধারণত,মশা-মাছি, পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি প্রাণীকে ফাঁদে ফেলে। তবে কোন কোন সময় ইঁদুর বা ব্যাঙ জাতীয় ছোট ছোট প্রাণীরাও এদের শিকারে পরিণত হয়। বেঁচে থাকা আর নির্দিষ্ট কোন পরিবেশে বৃদ্ধির কারণে এ ধরনের উদ্ভিদ মাংসাশী হয়ে থাকে।
বেঁচে থাকার জন্য সব উদ্ভিদকেই মাটি থেকে পানি এবং বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করতে হয়। সূর্যের উপস্থিতিতে এসব উপাদানের সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড মিলিত হয়ে গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। গাছের বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো নাইট্রোজেন। এজন্য নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ মাটিতে অধিকাংশ উদ্ভিদ সবচেয়ে ভালো জন্মে, কিন্তু মাংসাশী উদ্ভিদ জন্মে ভেজা আর স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জলাভূমিতে। এখানকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ খুব অল্প থাকে। যেসব গাছ মূল দিয়ে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে তারা এ পরিবেশের মাটিতে জন্মাতে পারেনা। বেঁচে থাকার জন্য মাংসাশী উদ্ভিদরা অন্য একটি পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রাণীকে ফাঁদে আটকে ফেলে। এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে। মাংসাশী উদ্ভিদের পাতাগুলো এ কাজে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।
প্রথমত এসব উদ্ভিদ প্রাণীদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আকর্ষন করে। অন্যান্য প্রাণীর মত এসব উদ্ভিদ কাছে গিয়ে কোন কিছু শিকার করতে পারেনা। বরং শিকার কখন কাছে আসবে এজন্য তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য পোকামাকড় এবং অন্য প্রাণীদের আকর্ষণ করতে তাদের বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। কোন কোন মাংসাশী উদ্ভিদ বাতাসে একধরনের গন্ধ ছড়ায় যা মাছি, মৌমাছি কিংবা পিঁপড়ার মত পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। আবার কোন কোন উদ্ভিদ মাছি কিংবা অন্য পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করতে একধরনের পঁচা গন্ধ ছড়ায়। অনেক মাংসাশী উদ্ভিদের দেহে উজ্জ্বল রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করার টোপ হিসেবে কাজ করে। কোন কোন উদ্ভিদের পাতার চারদিকে ছোট্ট মুক্তোদানার মত চকচকে কিছু জিনিসের আবরণে ঢাকা থাকে। এগুলো উজ্জ্বল রঙ এবং সুমিষ্ট গন্ধের সাহায্যে পোকামাকড়কে প্রলুদ্ধ করে। সুকৌশলে আটকে রাখা এসব ফাঁদে প্রাণীরা আটকা পড়ে।
মাংসাশী উদ্ভিদে সাধারণত দুই ধরনের ফাঁদ দেখা যায়। নড়াচাড়া করতে পারে এমন প্রত্যক্ষ ফাঁদ (Active Trap)। আর নড়াচাড়া করতে পারেনা এমন ফাঁদের নাম পরোক্ষ ফাঁদ (Passive Trap)। ফাঁদ যে ধরনেরই হোক না কেন সব ফাঁদই মাংসাশী উদ্ভিদকে পোকামাকড় ধরে খেতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি উদ্ভিদে আনেকগুলো ফাঁদ থাকে। সব ফাঁদই পোকামাকড় ধরা, পরিপাক করা আর পুষ্টি সংগ্রহের জন্য একযোগে কাজ করে।
০১. সানডিউজ বা সূর্যশিশির
মাংসাশী, পতঙ্গভুক উদ্ভিদ হলো Drosera sp. ড্রসেরা সাধারণত সানডিউজ বা সূর্যশিশির নামে পরিচিত, কমপক্ষে 194 প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদের অন্যতম বৃহত জেনার এটি। আমাদের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে ড্রসেরার একটি প্রজাতি রয়েছে। কিছুদিন আগে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষ থেকে আমরা একটি টীম, সেই ড্রসেরা রক্ষায় উদ্ভিদগুলোর চারপাশে বেড়া দিয়ে এসেছিলাম। কারণ অনেকেই না জেনে সেগুলো পায়ের নিচে ফেলে নষ্ট করে ফেলছিল। এখন সেগুলো বেড়ার ভিতর সংরক্ষিত আছে। সময় পেলে, আপনিও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ড্রসেলা দেখে আসতে পারেন। দারুণ চমৎকার।
(পড়ার সুবিধার্থে পর্ব আকারে আপলোড দিতে হচ্ছে। আগামী পর্বে আরও কিছু অদ্ভুদ উদ্ভিদ নিয়ে লিখবো। কেমন হচ্ছে জানাবেন। ধন্যবাদ)
বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ জগৎ (পর্ব-১)
বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ জগৎ (পর্ব-২)
আমার আরও কিছু লিখা, ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন। আশা করছি,ভালো লাগবে।
ল্যান্টেনা ফুল || প্রজাপতিরা যে ফুলে নেচে বেড়ায়
হিজল গাছ || এমনই-হিজল-বট-তমালের নীল ছায়ায় বাংলার অপরুপ রুপ

দারুন !
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।