উৎসঃ ইন্টারনেট

নিম বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica, এটি Meliaceae পরিবারের Azadirachta গণের একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ ঔষধি উদ্ভিদ যার ডাল, পাতা, ফল, ছাল-বাকল, বীজ এক কথায় সমস্ত অংশই ব্যবহারযোগ্য। নিমের উৎপত্তি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকাতে। এর আদিবাস মিয়ানমারে। ভারত এবং বাংলাদেশের প্রায় সবত্রই নিম গাছ জন্মে। এটি আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়, এর কান্ডের ব্যাস ২০-৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে, ডালের চারদিকে ১০-১২ ইঞ্চি যৌগিক পত্র জন্মে। এর পাতা ২.৫-৪ ইঞ্চি লম্বা হয় যা কাস্তের মত বাকানো থাকে এবং পাতার কিনারায় ১০-১৭ টি করে খাঁজযুক্ত অংশ থাকে। নিম গাছে ফল দেখতে অনেকটা আঙুরের মতো, এই ফলের একটিই বীজ থাকে। জুন-জুলাইতে ফল পাকে এবং কাঁচাফল তেতো স্বাদের হয়। তবে পেকে হলুদ হওয়ার পর মিষ্টি হয়। নিম গাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হতে ১০ বছর সময় লাগে। বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিমের অ্যান্টিসেপটিক গুণের জন্য এর বেশ কদর রয়েছে। নিম ছত্রাকনাশক, ব্যাকটেরিয়ারোধক ও ভাইরাসরোধক হিসেবে এবং কীট-পতঙ্গ বিনাশে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দন্ত চিকিৎসায় ব্যথামুক্তিতে, জ্বর কমাতে ও জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়। নিমের কাঠ খুবই শক্ত। এই কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না, পোকা বাসা বাঁধে না এবং উইপোকাও খেতে পারে না যার ফলে নিম কাঠ আসবাবপত্র তৈরির জন্য বেশ উপযোগী। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক নিম গাছ থেকে ৫০-৬০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এর ফল ও বীজ থেকে বিশেষ ধরনের ভেষজ তেল তৈরি করা হয়। লাল রঙের এই তেলের চড়া গন্ধ৷ এতে ট্রাইগ্লিসারাইড, ট্রাইটারপিনয়েড ও অ্যাজাডিরাকটিন (কীটনাশক) যৌগ আছে। এছাড়াও এতে এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড আছে৷ চামড়ার প্রদাহে নিমতেল বেশ কাজে লাগে৷ নিমতেল গর্ভনিরোধক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়৷

উৎসঃ ইন্টারনেট

আসুন জেনে নেয়া যাক নিমের কিছু ভেষজ গুণ ও এর ব্যবহার সম্পর্কেঃ

কফজনিত বুকের ব্যথায়: অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই ঔষধটি নিষেধ।

কৃমি সমস্যায়: পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেট বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এই জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়ো দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানিসহ খেতে হবে।

উকুন নাশে: নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক পরে মাথা ধুয়ে ফেললে ২/৩ দিনের মধ্যে উকুন মরে যায়।

অজীর্ণ রোগে: অনেকদিন ধরে পেটের অসুখ, পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস অর্ধেক কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।

খোস পাচড়ায়: নিম পাতা সিদ্ধ করে পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়।

ম্যালেরিয়ায়: গ্যাডোনিন উপাদান সমৃদ্ধ নিম ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া নিমপাতা সিদ্ধ পানি ঠাণ্ডা করে প্রতিদিন ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব কমে যাবে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণে: নিম তেল একটি শক্তিশালী শুক্রাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রানু মেরে ফেলতে সক্ষম।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: নিম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চমৎকার ভাবে কাজ করে। নিমের পাতা রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্ত নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। ভালো ফল পেতে নিমের কচি পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে খেলে তা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।

রূপচর্চায়: বহুযুগ ধরে রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। এছাড়া এটি ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। নিমপাতা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ারোধী। তাই ত্বকের সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। ব্রণের সংক্রমণ হলে নিমপাতা থেঁতো করে লাগালে ভালো ফল নিশ্চিত। নিয়মিত নিমপাতার সাথে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়। তবে হলুদ ব্যবহার করলে রোদ এড়িয়ে চলাই ভালো। নিমপাতার চেয়ে হলুদের পরিমাণ কম হবে। যাদের স্কিন ইরিটেশন এবং চুল্কানি আছে তারা নিমপাতা সিদ্ধ করে গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে নিন এতে আরাম হবে আর গায়ে দুর্গন্ধের ব্যাপারটাও কমে যাবে।

চুলের যত্নে: উজ্জ্বল,সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম পাতার অবদান অপরিসীম। চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে। চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার অদ্বিতীয়। প্রতি সপ্তাহে ১ দিন নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন এরপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমার সাথে সাথে চুল নরম ও কোমল হবে। মধু ও নিমপাতার রস একত্রে মিশিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগান, এবার ২০ মিনিট অপেক্ষা করে শেম্পু করুন আর পেয়ে যান ঝলমলে সুন্দর চুল। এক চা চামচ করে আমলকির রস, নিমপাতার রস এবং লেবুর রস প্রয়োজনমত টকদই এর সাথে মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিন চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু করুন আর অধিকারী হোন সুস্থ, সুন্দর, ঝলমলে ও দৃষ্টিনন্দন চুলের।

চোখের যত্নে: চোখে চুলকানি হলে নিমপাতা পানিতে দশ মিনিট সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে নিন। চোখে সেই পানির ঝাপটা দিন। আরামবোধ করবেন।

দাঁতের যত্নে: নিমের পাতা ও ছালের গুঁড়ো কিংম্বা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত মজবুত হয়।

ওজন কমাতে: যদি ওজন কমাতে চান তাহলে নিমের ফুলের জুস খেতে পারেন। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে শরীরের চর্বি ভাংতে সাহায্য করে। এক কাপ নিম ফুলের নির্যাস এর সাথে এক চামচ মধু এবং আধা চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করুন। দেখবেন কাজ হবে।

পোকা-মাকড়ের কামড়ে: পোকা মাকড় কামড় দিলে বা হুল ফোঁটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হবে।

ভাইরাল রোগে: ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক আগে থেকেই ভাইরাল রোগ নিরাময়ে নিম ব্যবহৃত হচ্ছে। নিমপাতার রস ভাইরাস নির্মূল করে। চিকেন পক্স, হাম ও অন্যান্য চর্মরোগ হলে নিমপাতা বাটা লাগানো হয়। এছাড়াও নিমপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে গোছল করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি দূর হয়।

ক্ষত নিরাময়ে: নিমপাতা ক্ষত নিরাময়ে বেশ উপকারী। নিমপাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে। এর অ্যান্টিমাক্রোবাইয়াল উপাদান ক্ষত নিরাময়ে দ্রুত কাজ করে।

বাতের ব্যাথায়: নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজও বেশ উপকারী।

উৎসঃ ইন্টারনেট

নিমের এসকল গুনাগুনের কথা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ‌একে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষণা করেছে। নিমের এতসব উপকারীতা থাকা সত্ত্বেও উপমহাদেশে দিন দিন নিম গাছের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে তাই এখনই সময় নিম গাছের উৎপাদন ও প্রসারকে উৎসাহিত করার এবং অন্যায়ভাবে নিম গাছ ধ্বংস করাকে নিরুৎসাহিত করার।

তথ্য সূত্রঃ

1. Moynul  Islam  et  al.  (2020).  A  Survey  of  Medicinal  Plants  Used  by  Traditional  Healers  and  Indigenous  People  of  Shariatpur District, Bangladesh. J.  of Advanced  Botany  and Zoology, V7I4.05.  DOI:  10.5281/zenodo.3841153;
2. Compact Oxford English Dictionary (2013), Neem, page 679;
3. Henry Yule and A. C. Burnell (1996), Hobson-Jobson, Neem, page 622, The Anglo-Indian Dictionary;
5. New York. Plant Risk Assessment, Neem Tree,Azadirachta indica, Biosecurity Queensland (2008);
6. Siddiqui, S. (1942). “A note on the isolation of three new bitter principles from the nim oil”. Current Science. 11 (7): 278–279;
7. Anna Horsbrugh Porter (17 April 2006). “Neem: India’s tree of life”. BBC News; 
8. The Tree. National Academies Press (US). 1992; D.P. Agrawal “Medicinal properties of Neem: New Findings” ;
9. S. Zillur Rahman and M. Shamim Jairajpuri. Neem in Unani Medicine. Neem Research and Development Society of Pesticide Science, India, New Delhi, February 1993, p. 208-219.
10. Callahan, Christy (11 October 2010). “Uses of Neem Datun For Teeth”. Livestrong.com. Demand Media;
11. Prakash, Gunjan; Bhojwani, Sant S.; Srivastava, Ashok K. (1 August 2002). “Production of azadirachtin from plant tissue culture: State of the art and future prospects”. Biotechnology and Bioprocess Engineering. 7 (4): 185–193.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here