আজকে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে মোট করোনা আক্রান্তজনের সংখ্যা একলক্ষ অতিক্রম করলো। করোনার লক্ষণ আছে কিন্ত পরীক্ষা সম্ভব হয়নি এমন রোগীর হিসেব করলে এসংখ্যা হবে আরো আশংকাজনক ও হতাশাজনক নি:সন্দেহে। অনেকের প্রিয়জন ইতোমধ্যে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন,এবং আমাদের অনেক প্রিয়জন পরিবারে আশংকাযুক্ত অবস্হায় আছেন। এ যেন বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অলংঘনীয় এক নিষ্টুর বাস্তবতা।
বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে করোনা এখনো ব্যাপক বিস্তৃত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা, আমাদের লকডাউনে আইন না মানা,চিকিৎসকদের আত্ববিশ্বাস তৈরী না হওয়া সহ নানা কারণে আমরা এক গভীর অন্ধকারের দিকে যেন নিমজ্জিত হচ্ছি। স্বাস্হ্যমহাপরিচালক মহোদয় বলেছেন দিনে সর্বোচ্চ ৬৫ হাজারের মতো মানুষ সংক্রমিত হতে পারে এইরকম আশংকার রিপোর্টও তাঁর হাতে আছে। এই আশংকা মিথ্যা প্রমাণ হওক।
পরিসংখ্যান যে রকমই হোক সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে করোনার প্রকোপ কমুক বা বাড়ুক বিশ্বব্যাপী এর বিস্তৃতি দীর্ঘমেয়াদি হবে। বাংলাদেশও এ অবস্হা থেকে সহজে নিষ্কৃতি পাবে বলে মনে হচ্ছেনা। স্বস্তির বিষয় হলো আমাদের অঞ্চলে বিস্তৃত করোনার আলাদা জিনোমের (প্রাণরহস্য) কারনে বিস্তৃতি এবং মৃত্যু কখনো এয়োরোপ আমেরিকার মতো হয়তো হবেনা।
মানুষকে সবচেয়ে আতংকিত করছে মিডিয়ার সংবাদসমুহ- যেমন এখন করোনা রোগী ছাড়া অন্যকোনো রোগী সচরাচর চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরেও তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। রোগীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে এম্বুলেন্সে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গতমাসে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে অতিরিক্ত সচিব গৌতম এইচ সরকারের। এই ধরণের ঘটনা এখন অহরহ-প্রতিনিয়ত ঘটছে।
তিনি কিডনি জটিলতায় অসুস্থ ছিলেন বেশ কয়েকদিন ধরে। অসুস্থতা নিয়ে ঘুরেছেন রাজধানীর একের পর এক ৯ টি হাসপাতালে। কেউ চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। কোনো জায়গায় চিকিৎসা না পেয়ে শেষে ৭ মে বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এই আমলাকে। পরে ৯ মে শনিবার দুপরে তার মৃত্যু হয়। তার মেয়ে ডা. সুস্মিতা এইচ জানিয়েছেন ,তার বাবার কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ না থাকলেও অন্য কোনো উপায় না পেয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাবার আইসিইউ সাপোর্টটা খুব দরকার ছিল। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। “বাবার চিকিৎসাই হল না, তিনি মারা গেলেন। আমি ডাক্তার হয়েও কিছু করতে পারলাম না।” এই অবস্হায় সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বটুকু সহজে টের পাওয়া যায়। এমতাবস্হায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতি খোঁজারও কোন বিকল্প নেই।
যদি করোনা রোগটি ঘুরে ফিরে রয়ে যায় তিন বছর বা তারও বেশী তখন পৃথিবীতে ১৮ শ শতকের ডারউইনের দেওয়া তত্বই কাজ করবে বলে মনে হয়।তিনি বলেছিলেন ” Survival of the fittest” (যোগ্যতমের ঊর্ধ্বতন) অর্থাৎ শুধু যোগ্যরাই টিকে থাকে অযোগ্যরা হারিয়ে যায়। করোনা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দীর্ঘদিন বিরাজমান থাকলে আপনি তার কাছ থেকে পালিয়ে অথবা নিজের ইমিউন সিস্টেম (প্রতিরোধ কৌশল) ঠিক রেখে যতদিন বাঁচতে পারেন বাঁচবেন। এক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য আমাদের নিজদেরকে পরিবর্তণ করার কোন বিকল্প নেই। আমাদের জীবনপদ্ধতিতে পরিবর্তণ আনতে হবে। পরিবেশকে নির্মল ও বিশুদ্ধ করা রাখতে হবে। টীকা আবিষ্কার হলেও সর্বজনীন হওয়ার জন্য আবিষ্কারের দিন হতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লেগে যেতে পারে। তাই এইসময়ে বেঁচে থাকা হবে এক নিদারুণ চ্যালেন্জ। এক্ষেত্রে নিজেকে এবং নিজের চারপাশের পরিবেশকে বদলে দিতেই হবে। পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস থাকলেই আমাদের ফুসফুস সুরক্ষিত থাকবে।
অন্যান্য রোগের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে আমাদের,যদি বর্তমানে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি করোনাকালে যেরকম নড়বড়ে হয়েছে সেরকমই থাকে। তাহলে আমাদের করোনার জন্য শুধু নয় অন্যান্য রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও বিকল্প মেডিসিন খুঁজতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে ভেষজ গাছ এবং পরিবেশের প্রতি দৃষ্টি দিতে পারেন। আমরা জানি বৃক্ষ এবং পরিশ্রম করো সাথে বেঈমানী করেনা।
এবার আসা যাক ধনী হওয়ার বা কোটিপতি হওয়ার সহজ উপায় এবং বিকল্প ওষুধ নিয়ে কিছু আশার কথা। নিশ্চয়ই ডেল কার্নেগী বা শিব খেরার পদ্ধতির কথা বলবনা কারণ যারা এদের পদ্ধতি ব্যাবহার করে ইতোমধ্যে ব্যার্থ হয়েছেন এই লেখাটি তাদের জন্য।চেস্টা একবার করেই দেখুন। নতুন স্বপ্ন নতুন উদ্দোগ অনেক সময় সফলতা বয়ে আনে।
আপনি চাইলে ভেষজ বাগান সৃষ্টি করে নিজের ধনী হওয়ার পথ যেমন তৈরী করতে পারেন ঠিক তেমনি দেশের আসন্ন পরিস্থিতিতে দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসেবে অসামান্য অবদান রাখতে পারেন।
ডারউইনের সন্ধানে যখন আমরা গেলামই চিকিৎসার ক্ষেত্রেও আমরা কিছু সময় অষ্টাদশ শতাব্দিতে বিচরণ না হয় করেই দেখি। ঐসময় এলোপ্যাথি সাধারণের কাছে তেমন করে পৌঁছায়নি ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ভেষজ উদ্ভিদ ছিল একমাত্র ভরসা।
আগ্রহী এবং নতূন উদ্দোক্তাদের আমি ভেষজ উদ্ভিদ ও বৃক্ষের বাগান সৃজনের কথা বলছি। কোন জায়গাই আমাদের এখন পরিত্যক্ত রাখার সুযোগ নেই। আপনার যদি পরিকল্পনা থাকে তাহলে আপনাকে সত্বর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে যোগাযোগ করতে হবে অথবা যারা এসব ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সফলতা অর্জন করেছেন তাদের খুঁজে বের করতে হবে। জুন এবং জুলাই মাস বৃক্ষরোপনের জন্য আদর্শ সময়।
আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ৩ শতাধিক ইউনানী ও ২ শতাধিক আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বহু ভেষজ প্রসাধনী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে বছরে ২০ হাজার টনেরও বেশি ভেষজ কাঁচামালের চাহিদা রয়েছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর সাড়ে ৩০০ থেকে পৌনে ৪০০ কোটি টাকার ভেষজ সামগ্রী আমদানি করা হয়। এগুলো সাধারণত ভেষজ ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আমি শুধু আগ্রহ এবং কৌতূহল তৈরী হওয়ার জন্য হাজারো ভেষজ উদ্ভিদ থেকে নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের কয়েকটি প্রধান ঔষুধি গুনের কথা এবং নিমের উপকারিতা ও এর চাষে লাভের ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখ করছি।
মিঠাজহর বা কাটাবিষ: (একোনাইট) এর মূলের রস নিউরালজিয়া বা গেঁটেবাতে মালিশ করা হয়।হোমিও ক্ষেত্রে এটি সর্দি কাশির উত্তম ওষুধ।
যষ্টিমধু: জ্বরভাব,কফ,শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
সর্পগন্ধা: এতে ৩০ টি আ্যালকালয়েড আছে।এটি উচ্চরক্তচাপ,মৃগী রোগে ব্যবহৃত হয়।এটি সিডেটিভ।
কালোমেঘ :পাকস্থলী সংক্রান্ত রোগে ব্যবহৃত হয়।
কুইনিন: (সিনকোনা) ম্যলেরিয়া এবং অন্যান্য জ্বররোধক।
এফিড্রিন :ঠান্ডা,হাঁপানি,হার্টের উত্তম ওষুধ।
বেলেডোনা:ব্যথা,হুপিং কফ, চোখের রোগে ব্যবহৃত।
ধুতুরা:অম্ল,কৃমি,বদহজম ও হাঁপানির ওষুধ।
কোকেন:এনেস্টেটিক,স্নায়বিক,পরিপাকীয় টনিক।
ঘৃতকুমারী (এলোভেরা):মস্তিষ্ক শীতলকারক।
গন্ধভাদুলী:ডায়রিয়া ও আমাশয়ের একটি ভালো ওষুধ।
নাক্সভমিকা: স্নায়ুর গোলযোগে,হোমিও ক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহার আছে।
চালমুগরা: কোষ্ঠরোগের ও চর্মরোগের ওষুধ।
ইসবগুল:বিরোচক, কোষ্টকাঠিন্য,ও পরিপাকের গোলযোগে ব্যবহৃত।
কুরচি:কৃমি নিবারনে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া শিমুল,আমলকি,উলটচন্ডাল,মহুয়া,হরিতকি, মেহেদি,পেঁপে,আগর,শতমূলী,বাঁদরলাটি,বহেড়া,জলপাই,ডাঁট,কদবেল,মুক্তাঝুরি,পলাশ,জয়পাল,ত্রিধারা,কামরাঙা,অড়হর,ঘৃতকাঞ্চন,বকুল,গাঁজা,আকন্দ,
নয়নতারা,পুনর্ণভা,ব্রাম্মী ইত্যাদি ভেষজ উদ্ভিদ গুরুত্বপূর্ণ নানারোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। তবে মনে রাখতে হবে কোন ভেষজউদ্ভিদই এখনো পর্যন্ত করোনার নিশ্চিত প্রতিষেধক হিসেবে প্রমাণিত হয়নি।
ইদানিংকালে এলোপ্যাথিক ওষুধের প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে এবং ভেষজ ওষুধের প্রতি মানুষের আগ্রহ বিশ্বাস ও নির্ভরতা বাড়তে শুরু করেছে।
পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলোতে যেসব অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরি করা হয় তার প্রায় ৩৩ শতাংশ ভেষজ রাসায়নিক থেকে প্রস্তুত করা হয়।
রাশিয়ায় প্রস্তুত ও ব্যবহৃত অ্যালোপ্যাথি ওষুধের শতকরা ৪৭ শতাংশেরও বেশি ভেষজ থেকে প্রস্তুত করা হয়। অনুজীব উদ্ভূত ৬০ শতাংশ অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুত হয় ভেষজ থেকে।
ফ্রান্স-জার্মানিতে প্রায় ৩০-৪০ ভাগ চিকিৎসক তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান কাজে ভেষজ ওষুধের ওপর নির্ভর করে থাকেন।
বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যাবহার করার কারনে এইডস, ক্যান্সার, হার্টের রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের অনেক “Wonder drug” যে অদুর ভবিষ্যতে ভেষজ গাছ থেকেই আবিষ্কৃত হবে সেই আশাবাদ আজ সমগ্র বিশ্বই পোষণ করছে।
শ্রীলংকার স্বাস্হ্য পরিচর্যার ৭০ শতাংশ চাহিদা ভেষজ ওষুধ নির্ভর চিকিৎসা পুরণ করে থাকে।
চীনে এখন রোগীদের প্রথম পছন্দ ভেষজ ওষুধ।তারা আবিষ্কার করেছে বিস্ময়কর anaesthetic,male CONTRACEPTIVE (gossypol) antidiabetic drug (ginsenin)।
জার্মানে ২০০ টির বেশী ভেষজ উদ্ভিদ নিবন্ধিত। ভেষজ ওষুধের উন্নয়নে তারা প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যায় করে।
ভারতে ভেষজ-ওষুধ জননন্দিত, সেখানে ১০০ এর বেশি সরকারি ভেষজ মহাবিদ্যালয় আছে ৩০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেষজ অনুষদ আছে, স্বীকৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ওষুধ প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান আছে বিপুল সংখ্যক।
জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ডাবর (Dabur) এর মালিক অমিত বর্মণ ও তার পরিবার,কোম্পানির শুরু ভেষজ ওষুধ দিয়ে এবং বর্তমানে প্রাকৃতিক ভোগ্য পন্যেরও এটি বড় প্রতিষ্ঠান। এদের গত বছরের আয় বিস্মিত হওয়ার মতো প্রায় ৪১৪ বিলিয়ন রুপি।কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজার।
বাসক
বাসক অর্থ সুগন্ধকারক,বাসকেরপাতায় “ভাসিসিন” নামের ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ।বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এ পাতা ব্যবহার করে তৈরি করছে কফ নিরাময়ের সিরাপ। এছাড়াও বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার হচ্ছে। তাই বেড়ে চলেছে এর চাহিদা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসের কারণে কাশির সমস্যা হয়ে থাকে। যেটা সব সময় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যায়না। বরং এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়।পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের উপ পরিচালক ডাঃ সুজান হপকিন্স বলেছেন: “মানুষের শরীর যদি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে পড়ে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ করতে ব্যর্থ হয়, এবং রোগের চিকিৎসা করা আরও জটিল হয়ে যায়।
বুকে কফ এবং এর জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয় তখন বাসক পাতার রস ১-২ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
আমাদের দেশে অনেক জায়গায় বাসক গাছ বাণিজ্যকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এর পাতা অর্থাৎ বাসক পাতা ওষুধ কোম্পানিগুলো কিনে থাকে। এ থেকে বোঝা যায় এই পাতার কত গুণ। দেহের বিভিন্ন রোগ ছাড়াও পানির জীবাণু মুক্ত করতে, হাত-পা ফুলে গেলে, চামড়ার রং উজ্জ্বল করতেও এ গাছের উপকারিতা অনেক।
বাসক পাতা চাষে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন- এই উদ্ভিদ দিয়ে বাড়িঘরের বেড়া দেওয়া হয়। পাতা ছিঁড়লেও গাছ মরে যায় না। আবারও নতুন পাতা গজায়। সারা বছর চলে নতুন পাতা গজানো। ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে দিলেই জন্মায় নতুন গাছ। প্রয়োজন হয়না আলাদা কোন জায়গার,রাস্তার দুপাশে,ঘরের এবং চাষের জমির চারপাশে গাছ লাগানো যায়।
অশ্বগন্ধা (করোনা নিরাময়ে) :
আমাদের শরীরের বাতের ব্যথা, অনিদ্রা থেকে বার্ধক্যজনিত সমস্যা। এ সবের নিরাময়ে অশ্বগন্ধার বিকল্প নেই। তেমনটাই তো বলেন বিশেষজ্ঞরা।
এমনকি যৌবন ধরে রাখতেও অশ্বগন্ধার উপকারিতা অনস্বীকার্য। ত্বকের সমস্যাতেও দারুণ কাজ দেয় অশ্বগন্ধার ভেষজ গুণ। বিদেশেও এর চাহিদা ব্যাপক।
আইআইটি দিল্লি এবং জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির যৌথ গবেষণায় গবেষকদের দাবি, অশ্বগন্ধার মধ্যে ‘উইথানন’ নামের একটি রাসায়নিক রয়েছে, যেটি কোভিড-১৯ এর এনজাইমের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে। তর্থাৎ মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমিত হওয়া আর ‘ভাইরাল লোড’ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে রোধ করে এই রাসায়নিক।
এক বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ হাজার অশ্বগন্ধার চারা লাগানো যেতে পারে। এর জন্য খরচও খুব একটা বেশি নয়। প্রতিটি চারার দাম তিনটাকা। আর বীজ থেকে চারা তৈরি করতে চাইলে, তিনশো গ্রাম বীজেই এক বিঘায় অশ্বগন্ধা চাষ হয়ে যাবে। চারা লাগানোর আট মাস পর থেকেই পাওয়া যায় অশ্বগন্ধার ভেষজগুণ।
সে কারণেই অশ্বগন্ধা চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা আছে ভবিষ্যতে।
নিম
বলা হয় নিম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বৃক্ষ। নিমের এ গুণাগুণের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষণা করেছে।
নিম পরিবেশ রক্ষা, দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক অবদান রাখে; নিম থেকে উৎপাদিত হয় প্রাকৃতিক প্রসাধনী, ওষুধ, জৈবসার ও কীটবিতাড়ক উপাদান; নিম স্বাস্থ্য রক্ষাকারী, রূপচর্চা, কৃষিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়; নিমকাঠ ঘূণে ধরে না, নিমের আসবাবপত্র ব্যবহারে ত্বকের ক্যান্সার হয় না; নিম পানি স্তর ধরে রাখে শীতল ছায়া দেয় ও ভাইরাসরোধী; উপকারিতা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে ঘোষণা করেছে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ হিসেবে; নিম শিল্প বিপ্লবের ফলে উদ্ভূত দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে; নিম ঝড়-ঝাঞ্ঝা ও ঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করে এবং নদীভাঙন ঠেকায়; নিমের সব অংশই ব্যবহারযোগ্য ও উপকারী; নিম মাটির লবণাক্ততা রোধ করে এবং অম্ল ও ক্ষারের সমতা ফেরায়; নিম গাছ বাতাস শীতল রাখে এবং অন্যান্য গাছের তুলনায় নিম গাছের নিচে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি কম থাকে; নিমপাতা গুঁড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী; নিমগাছ দ্রুতবর্ধনশীল এবং কাঠ খুব দামি; নিম যে কোনো মাটিতে জন্মে ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে; নিম পরিবেশেবান্ধব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অদ্বিতীয়।
১০ বছর বয়সের দুটি নিম গাছের পাতা ও বীজ বিক্রি করে ৫ জনের পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষণ সম্ভব; নিম ফুলের মধু অন্যান্য ফুলের মধুর তুলনায় অধিক পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন; নিম মাটির ক্ষয় ও মরুময়তা রোধ করে; কৃষি বনায়ন বা কৃষি জমির আইলে নিম গাছ লাগালে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়।
নিম থেকে তৈরি ওষুধ, প্রসাধনী, জৈবসার ও কীট বিতাড়ক হিসেবে সারা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত; নিমের পাতা, ছাল-বাকল, বীজ ও কাঠসহ সব অংশই রফতানিযোগ্য; নিমগাছ গরু ছাগলে খায় না এবং বাঁচে ৪০০ বছরের অধিক; নিমের জৈবকীট বিতাড়ক ও সার, উপকারী কোনো কীট পতঙ্গ বা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতি করে না; নিমের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানো যায়; নিম পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান বৃক্ষ।
শ্বাসকষ্ট এবং দুর্বলতায় নিম ফুল উপকারী। এছাড়া বাতজ্বরে নিমতেল ব্যবহার সারা পৃথিবীতেই স্বীকৃত। নিম বীজের গুঁড়াও নিমতেলের মতো কার্যকরী, তবে বীজের গুঁড়া পানি ও অন্য তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়।
বসন্ত রোগে রোগীকে নিমপাতার বিছানায় শোয়ালে জীবাণুনাশক হিসেবে ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। বসন্ত যখন মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছিল তখন নিম ছিল একমাত্র বিকল্প ভরসা।নিমের এ জীবাণু ধ্বংসকারী গুণের জন্য ফোঁড়া কাটা পোড়ার ক্ষত দাগ, একজিমা, স্ক্যাবিস, খুসকিসহ বিভিন্ন জটিল চর্মরোগে নিমপাতা বাটা ও ছালের প্রলেপ দিলে অল্প সময়ে সেরে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষিত একুশ শতকের বৃক্ষ এবং বর্তমান বিশ্বেও সবচেয়ে গুণধর আলোচিত ভেষজ নিম থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন নিম সামগ্রী।
বাজারে নিমের যেসব পণ্য পাওয়া যায়-নিম চা, নিম ক্যাপসুল, নিম ডায়বেটিকস ক্যাপসুল, নিম চুল রক্ষাকারী ও খুশকিনাশক, নিম জৈবসার, নিম জৈববালাইনাশক, নিম পিওর অয়েল, নিম হারবাল বিউটি প্যাক, নিম হারবাল ফেসওয়াশ, নিম হারবাল কেশতেল, নিম শ্যাম্পু, নিম হারবাল টুথ পাউডার, নিমটুথ পেস্ট, নিম বেবি সোপ, নিম হারবাল হানি সোপ, বিউটি সোপ, স্কিন কেয়ার সোপসহ আরও অনেক নিম সামগ্রী।
এক একরের বয়স্ক পরিপক্ব নিম গাছ থেকে বছরে ৮/১০লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। তাহলেতো ১০ বছরেই কোটিপতি হওয়া সম্ভব হবে এক নিমগাছের ভেষজ বাগান থেকেই। এটি কোন দু:স্বপ্ন নয়।
ভেষজ উদ্ভিদ চাষে যেহেতু তেমন কোনো সার বা কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। তাই এই বাগান সৃজনে ব্যয় খুবই কম।
ভেষজ উদ্ভিদ যথেষ্ট মাত্রায় পরিবেশবান্ধব। প্রায় সব ভেষজ উদ্ভিদেরই পরিবেশ বিশুদ্ধকরণের ক্ষমতা রয়েছে। ভেষজ উদ্ভিদ বাতাসে বিরাজমান বিভিন্ন রোগ জীবাণুকে প্রাকৃতিকভাবে বিনষ্ট করতে সক্ষম। তাই অধিকহারে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ আমাদের ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়া পরিবেশ বিশুদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন সেখানে ১৫ নম্বরে কোন জমি যাতে পতিত না থাকে সে কথা বলা হয়েছে।
২৭ নম্বরে চাষাবাদের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাও নাগরিকের দায়িত্ব।
একটি সুপরিকল্পনা,সুন্দর পরিবেশ রক্ষায় যেমন অবদান রাখবে তেমনি জনমানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায়, রোগ নিরাময়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে সন্দেহ নেই, পাশাপাশি খুবই স্বল্প বিনিয়োগে ভেষজ/বিকল্প মেডিসিনের বাগান দেশের ভূমির সর্বোত্তম ব্যাবহার করে নিশ্চিত আয়ের একটি স্বপ্নের পথ তৈরী করবে।
রেফারেন্স :
১। Economic Botany, Bendre A, kumar
২। Medicinal plants, jain s,k,
৩।অর্থনৈতিক উদ্ভিদবিদা, আবুল কালাম আজাদ,মো
৪।ভেষজ ওষুধ, গনি,আবদুল
৫।নিম বহুমুখী উপকারী একুশ শতকের ভেষজ বৃক্ষ। কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*।(কৃষি তথ্য সার্ভিস)।
৬।ভেষজ উদ্ভিদের চাষ গুরুত্ব ও সম্ভাবনা
রায়হান পারভেজ রনি। কৃষি বাতায়ন – ১৪-০৬-২০১৭।
৭।করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা এপ্রিল ০৩।
৮। বাংলাদেশ জার্নাল ১৪ মে ২০২০।
৯। আমাদের সময় ২০ মে ২০২০।
Rezaul Karim Tarek
Associate Professor
Department of Botany, Cox’s Bazar Govt. College