পর্ব: ১


বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সম্ভারের অন্যতম জায়গা জুড়ে Non-human Primates। বর্তমানে আমাদের দেশে রয়েছে ১০ প্রজাতির Non-human Primates. আর এদের মধ্যে রয়েছে উল্লুক, ৬ প্রজাতির বানর আর ৩ প্রজাতির হনুমান।

আসি এবার হনুমান এর গল্পে।

Northern Plains Langur ( Semnopithecus entellus)
বাংলা নাম ধূসর হনুমান
বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রাপ্ত হনুমান গুলো হলো এই প্রজাতির হনুমান। অনেক সময়, যশোর এর হনুমান ও কেশবপুর এর হনুমান ও বলা হয়।
মূলত যশোর জেলার কেশবপুর এ মনিরামপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গবেষণা অনুযায়ী সংখ্যায় 204 টি হনুমান বিদ্যমান( আইইউসিএন বাংলাদেশ ২০১৫)।
বাংলাদেশ এ প্রাপ্ত একমাত্র Non-human Primates যাকে তিন ধরনের প্রধান বনাঞ্চল( চিরসবুজ, পত্র ঝড়া, ম্যানগ্রোভ) এর কোনটিতেই পাওয়া যায় না।
এদের বাংলাদেশে অবস্থান নিয়ে একটি মজার ব্যাপার হলো এরা আমাদের দেশে Introduced. শ্রীলঙ্কা থেকে একজন জমিদার কয়েকশত বছর আগে একজোড়া হনুমান নিয়ে আসেন পালনের জন্য। সেখান থেকে বংশ বৃদ্ধি করে এরা ছড়িয়ে পরে চারিদিকে। সংখ্যা বাড়তে থাকে কিন্তু একটা সময় বনজঙ্গল ছিলো প্রচুর। কালের পরিক্রমায় এখন তাদের সেই বসবাস এবং খাদ্য সরবরাহ কারী উদ্ভিদ গুলো নেই। তাই তাদের সংখ্যাও দ্রুত কমে গিয়েছে এবং আইইউসিএন ২০১৫ এর তথ্য মতে এই হনুমান আজ বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বাইরে, Eastern India (Andhra Pradesh, Bihar, Chattisgarh, Jharkhand, Madhya Pradesh, Maharashtra, Orissa, and West Bengal) and এবং Nepal.
এগুলি কিছু হিন্দু দ্বারা পবিত্র হিসাবে বিবেচিত হয় এবং “হনুমান ল্যাঙ্গুর” নামটি হিন্দু দেবতা ভগবান হনুমানের কাছ থেকে এসেছে। এজন্য অনেক স্থানে হনুমান এর এই প্রজাতি কে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহন করা হয়।

ধূসর রং এর হনুমানটির মুখ ও হাত ও পায়ের পাতা কালো। মুখপোড়া হনুমান এর মতো এর মাথার উপরটা কালো নয়।
দেহের অর্ধেক দৈর্ঘ্যর লম্বা একটি লেজ বিদ্যমান।

স্ত্রী হনুমান ৩০ বছর পর্যন্ত বাচেঁ আর পুরুষ হনুমান ১৮ বছর।

খাদ্য হিসাবে ফল, পাতা, নরম কান্ড খেয়ে থাকে। এছাড়া এই প্রজাতির যে সকল সদস্য মানুষের আশেপাশে থাকে, তারা লোকালয়ে মানুষের থেকেও খাবার সংগ্রহ করে খায়।

একটি স্ত্রী হনুমান পর্যাপ্ত খাদ্যপেলে ৪-৮ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। গর্ভকাল ২০০ দিন। একবারে একটি বাচ্চা প্রসব করে। মানুষের মত কখনও কখনও জমজ বাচ্চাও জন্মাতে দেখা যায়।

এই হনুমান দের জীবন ধারা সামাজিক। তারা গ্রুপবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। একটি গ্রুপে একজন প্রধান পুরুষ বা দলপতি ও একাধিক মহিলা সদস্য নিয়ে গঠিত। দলপতি ছাড়াও দলে অনেক সময় পুরুষ সদস্য থাকে। গ্রুপের সমস্ত কিছু পুরুষ সদস্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন্যসদস্যদের তার নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। বাচ্চাদেরও সামাজিকতা দেখা যায় এমন কি ছোট সদস্যদের একত্রিত হয়ে খেলাধূলা করতে দেখা যায় দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে। প্রতিটি গ্রুপ তাদের নিজেদের Territory মেনে চলে। এবং ঐ এলাকায় ঘুরে ঘুরে খায়। একই গ্রুপে বড় সদস্য রা ছোট ভাই বোন দের যত্ন নেয় যখন মা হনুমান ব্যস্ত থাকে।

এই হনুমান দের মধ্যে Infanticide নামক ঘটনা দেখা যায়। অনেক সময় গ্রুপ দলপতি অন্য সদস্য দ্বারা বা বহিরাগত কোন পুরুষ দ্বারা আক্রমণ এর শিকার বা পরাজিত হলে তাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন ঐ গ্রুপে থাকা বাচ্চা বিশেষ করে ছোট পুরুষ সদস্য কে মেরে ফেলা হয় যেন ভবিষ্যতে Rivals Male তৈরী না হয়। এছাড়া স্ত্রী সদস্য কে পুনরায় দ্রুত প্রজননক্ষম তৈরী করার জন্যও বাচ্চা সদস্য কে মেরে ফেলা হয়।

এই প্রজাতির হনুমান রা ২০ ধরনের শব্দ তৈরী করতে পারে যা কিনা যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নিজেদের মধ্যে। এছাড়া মুখোভঙ্গি এর মাধ্যমে তারা নিজেরা যোগাযোগ করে থাকে।

বাংলাদেশের হনুমানের কিছু মজার তথ্য:
হনুমান রা তাদের উপর অপরাধ বা কোন দূর্ঘটনার বিচার চাওয়ার জন্য থানা ঘেরাও করে এমন কি রাস্তা অবরোধ করেছে যশোর এর কেশবপুর এ।

কেশবপুর এর হনুমান বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত।

বর্তমানে গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর ফলে তারা লোকালয়ে মানুষের উপর নির্ভর হচ্ছে এবং মানুষের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।

তথ্যসূত্র:
Encyclopedia – V. Mammals
IUCN Bangladesh 2015 V. Mammals
Photographic Guide of Wildlife of Bangladesh 2018 M.H. Khan
https://www.neprimateconservancy.org/northern-plains-gray-langur.html

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here