কুম্ভি ছোট থেকে মধ্যম আকৃতির প্রচুর ডালপালা বিশিষ্ট পাতাঝরা গাছ। উচ্চতায় ১৫ থেকে ২০ মিটার। বৈজ্ঞানিক নাম : Careya arborea. এটি Lecythidaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এর বাংলা ও স্থানীয় নাম কুম্ভি, ভাকাম্বা, কুমহি, কাম্বার, কুম্ভিপাতা, বিড়িপাতা, টেন্ডুপাতা, খাত্রাপাতা, গাডিলা বা গাডুলা (ঢাকা-ময়মনসিংহ) বল-ডিম্বেল বা গাম্বেল (গারো) ইত্যাদি। ইংরেজিতে Slow-match tree, Wild Guava, Ceylon Oak, Patana Oak ইত্যাদি নামে পরিচিত। কুম্ভি গাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশে কুম্ভি একটি বিপদাপন্ন দেশীয় প্রজাতির বিরল গাছ। ২০১২ সালের প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে কুম্ভি গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে অভিহিত।

ছবিঃ লেখক

বাংলাদেশে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শাল বনে এবং চট্টগ্রামসহ সিলেটের আদমপুর বনাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে জন্মানো কদাচিৎ কুম্ভি গাছ দেখা যায়। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে লাগানো কিছু কুম্ভি গাছ রয়েছে। কুম্ভি গাছের এই ছবিটি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের পাশ থেকে তুলেছিলাম ২০১৭ সালে। কুম্ভি গাছের গুঁড়ি কাণ্ড আঁকাবাঁকা, বাকল গাঢ় ধূসর বা বাদামি এবং বাকলের উপরিভাগ খাঁজ ও ভাঁজযুক্ত। পাতা সরল, ডিম্বাকার, লম্বায় ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার ও চওড়ায় ৭ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার, কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা। ডালপালার অগ্রভাগে পাতাগুলো ঘনবদ্ধভাবে বিন্যস্ত। শীতকালে পাতা ঝরে পড়ার আগে কমলা-লাল রঙের হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গুচ্ছাকার স্পাইক পুষ্পবিন্যাসে বড় আকারের হলুদ বা সাদা রঙের ফুল ফোটে। ফল বেরী জাতীয়, গোলাকার, ৫.০ থেকে ৭.৫ সেন্টিমিটার ব্যাসযুক্ত, মাংসল ও রসাল, দেখতে অনেকটা পেয়ারার মতো। ফলের শেষ প্রান্ত পানির কলসের মতো গহ্বরযুক্ত। জুন-জুলাই মাসে ফল পরিপক্ব হয়। প্রতিটি ফলে রয়েছে অসংখ্য বাদামি রঙের বীজ।

বন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে কুম্ভি বীজ থেকে গাছ জন্মায়। কাঠ হালকা থেকে গাঢ় লাল রঙের এবং মধ্যম শক্ত। কাঠের সংকোচন ক্ষমতা অধিক এবং পানিতে টেকসই। ঘর তৈরির খুঁটি, তক্তা, আসবাবপত্র, কেবিনেট এবং কৃষি সরঞ্জামাদি তৈরিতে কাঠ ব্যবহার করা হয়। বাকল থেকে ট্যানিন ও তামাটে রং পাওয়া যায়। বাকলের আঁশ দিয়ে মোটা দড়ি এবং ব্রাউন পেপার তৈরি করা হয়। ভারতে বাকল থেকে সংগৃহীত রস কাশি, ঠাণ্ডা, ফোলা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বাকলের রস দেহের উপরিভাগে মালিশ এবং কচি কোমল পাতা প্রলেপ দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে এক সময় এ গাছের পাতা ধূমপানের বিড়ি বানানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। ফল ভক্ষণযোগ্য, তবে বীজ সামান্য বিষাক্ত।

8 COMMENTS

  1. দুটো প্রশ্ন আছে :
    ১. কুম্ভি নামটা দ্ব্যর্থবোধক। বারিংটোনিয়া গণের প্রজাতি রাসেমোসাও কুম্ভী নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে কি বিকল্প বাঙলা নাম গ্রহণ করা ভালো নয়? অনেক গাছের ক্ষেত্রেই, লক্ষ্য করেছি, আমাদের উদাসীনতায় ধীরে ধীরে আসল নাম হারিয়ে গেছে। শুধু তা-ই না, বানানবিভ্রাটের মহোৎসবও দেখি অনেক বাঙলা নামেই।

    ২. কুম্ভী গাছটি যে বিপন্ন, এই তথ্যের উৎস জানতে চাই। কোনো গবেষণাপত্র বা বইয়ের সূত্র দেয়া যাবে কি যেখানে এ উদ্ভিদটিকে বিপন্ন, বিপদাপন্ন বা সঙ্কটাপন্ন দেখানো হয়েছে?

    লেখক ও সম্পাদককে গুরুত্বপূর্ণ লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

    • কুম্ভ মানে হলো কলস। কুম্ভি ফলের নিচের দিকটা কলসের মতো আকৃতির বলেই এই নামকরণ।
      ২০১২ সালের প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে কুম্ভি গাছ রক্ষিত উদ্ভিদ হিসেবে অভিহিত।
      বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলোই এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত

      • “বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলোই এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত” – এটুকু বোধহয় ঠিক নয়, দাদা। Abrus precatorius L., Aegiceras corniculatum (L.) Blanco, Aglaia cucullata (Roxb.) Pellegr., Calophyllum polyanthum Wall. ex Planch. & Triana, Vitex peduncularis Wall. ex Schauer যে বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় এ কথা বাংলাদেশের বড় শত্রুও বলতে পারবে না।

        এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসীল প্রণয়নকারী একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তিনি জানালেন, (১) গাছের প্রাপ্যতা (২) দারুমূল্য এবং (৩) কর্তনের প্রবণতা। সেক্ষেত্রেও অনেক উদ্ভিদ বাংলাদেশে বিপন্ন হলেও এই তালিকায় নেই। যেমন : Aglaia edulis (Roxb.) Wall., Holigarna caustica (Dennst.) Oken, Mangifera sylvatica Roxb., ক্রিটিক্যালি এনডেন্জার্ড। কিন্তু তালিকায় নেই।

        বিষয়টি আরেকবার চিন্তা করা দরকার। নয় কি?

    • Careya arborea- এর synonym হলো Careya sphaerica .বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম – এর বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের তালিকায়( Threatened plants of Bangladesh) এর উল্লেখ রয়েছে।

      • ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের Threatened plants of Bangladesh এর লিংক বা কোনো সূত্র দিতে পারবেন, দাদা?

  2. ধন্যবাদ ,বিলুপ্তপ্রায় বন্য উদ্ভিদ নিয়ে বিস্তারিত বর্ননা তুলে ধরার জন। এগিয়ে চলুণ,পাশে আছি সর্বদা।

  3. বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here