“সুউচ্চ বুদ্ধনারকেল”

0
1145

বুদ্ধনারকেল (Pterygota alata) Malvaceae পরিবারের Pterygota গণের উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি ১৮৪৪ সালে উইলিয়াম রক্সবার্গ কর্তৃক প্রথম রেকর্ড করা হয়। ফুল কিংবা ফলের জন্য নয় এটি তার আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই বিখ্যাত। এই গাছ আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রচুর পরিমাণ দেখা গেলেও তুলনামূলকভাবে অন্য শহরে অনেক কম দেখা যায় । গাছের কাণ্ড বেশ বড়, গোলাকার এবং যথেষ্ট বলিষ্ঠ। এর শাখা-প্রশাখা গুলো ততটা লম্বা নয়, অনেকটা বিক্ষিপ্ত ধরনের। অবশ্য অল্প বয়সী গাছের বৈশিষ্ট্যটি তেমন স্পষ্ট নয়। বাকল মসৃণ ও ধূসর। ভূমিলগ্ন কাণ্ড ও গোড়া গভীর খাঁজযুক্ত। পাতা তুলনামূলকভাবে বড়ই বলা চলে। দেখতে অনেকটা তাম্বুলাকৃতির, দীর্ঘবৃন্তক, শাখান্তে একান্তরভাবে ঘনবদ্ধ গাঢ়-সবুজ এবং শিরা বিন্যাস যথেষ্ট সুস্পষ্ট। বসন্তের শুরুতেই গাছটি পাতা ঝরাতে শুরু করে। কিন্তু চৈত্র মাসের প্রথম ভাগেই আবার অসংখ্য পাতায় ঢেকে যায় সারা গাছ। তবে বিলম্বিত পত্রোদ্গম এ গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কচি পাতার রং অনেকটা ম্লান সবুজ। পরিণত বৃক্ষ ছায়াসমৃদ্ধ না হলেও নতুন গাছ পত্রনিবিড়। ফুল ফোটার মৌসুম বসন্তকাল। এর স্বল্পপৌষ্পিক মঞ্জরি নিতান্তই অনাকর্ষী। পাপড়ির বাইরের দিকটা বাদামি রঙের, আর ভেতরটা লাল রঙের, পরাগকেশর পাঁচটি। এর ফুল দুর্গন্ধযুক্ত। যে ফলের জন্য গাছটির এমন নামকরণ, সে ফলটি কিন্তু দেখতে মোটেই নারকেলের মতো নয়। তবে ফলের শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতো স্বাদ। মাঝারি আয়তনের প্রায় গোলাকার এই ফলগুলো ঘন বাদামি রঙের। পরিণত ফলগুলো আপনা-আপনিই ফেটে যায়। এর পর বীজগুলো বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই গাছের কাঠ বেশ মূল্যবান। বীজ কোনো কোনো অঞ্চলে আফিমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার্য। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ভারত, সিকিম ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে এই গাছ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে গিয়ে আপনি রাজু ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়ালে সবচেয়ে উঁচু যে গাছটি চোখে পড়বে, তার নাম ‘বুদ্ধনারকেল’। প্রাক্-বর্ষায় এদের প্রস্ফুটন প্রাচুর্য উপভোগ করা যায়। এই শহরে বুদ্ধনারকেলের মতো এমন উঁচু গাছ অনেকটাই দুর্লভ। কাছাকাছি উচ্চতার মধ্যে রয়েছে দেবদারু। জানামতে, ঢাকায় সবচেয় বেশি বুদ্ধনারকেল দেখা যায় দিলকুশা-সংলগ্ন বঙ্গভবনের সীমানাপ্রাচীরের পাশে। রমনা উদ্যানেও আছে দু-একটি।
ঢাকার বাইরে এই গাছ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রংপুর জেলা শহরে। সেই সূত্রে রংপুর শহরকে নিশ্চিতভাবেই বুদ্ধনারকেলের শহর বলা যায়। গাছটির নামের সঙ্গে নারকেল শব্দটি যথার্থ। কারণ, বড় আকৃতির ফলগুলোর ভেতরের একাধিক পাতলা শাঁস খেতে অনেকটা নারকেলের মতোই। আপনি ইচ্ছে করলে স্বাদ পরখ করার জন্য গাছতলা থেকে ফল কুড়িয়ে খেয়ে দেখতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here