ঢাকাই রান্নার ঐতিহ্যবাহী একটি পদ ‘ননিয়া শাক দিয়ে গরুর মাংস’। গরুর মাংস সবার কাছে প্রিয় হলেও ননিয়া শাকের নাম অনেকেই হয়তো প্রথম জানছেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, ভেষজ গুণে ভরপুর দারুণ এক উপাদান ‘ননিয়া শাক’। এটি খাদ্য হিসেবে উত্তম। গ্রামের বিস্তির্ণ মাঠে এই শাক জন্মে। আমরা এই পর্বে ননিয়া শাকের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছি।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে ননিয়া শাকে-

পরিচয়:
ননিয়া, নুনিয়া বা নুন খুড়িয়া শাক নামেই বেশি পরিচিত। তবে এটি দেশের অন্যান্য এলাকায় বুল খুরিয়া, নূনে শাক, বুল খুরিয়া নামেও পরিচিত। এই শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Portulaca oleracea। যা মূলত Portulacaceae পরিবারভুক্ত। এটি প্রধানত শাক হিসেবেই খাওয়া হয়। তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, এটির ঔষধি গুণাগুণ ব্যাপক। ফাল্গুন মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে এই শাক দেশের গ্রামাঞ্চলের মাঠে দেখা যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র এটি পাওয়া যায়। এছাড়া এশিয়া, ইউরোপ, মেক্সিকো এবং মধ্যপ্রাচ্যে শাক এবং সালাদ হিসেবে ননিয়া বেশ জনপ্রিয়।

এই শাকটির কাণ্ড মসৃণ। লাল বা লালচে সবুজ রঙের ননিয়া শাক মাটিতে কাণ্ড ছড়িয়ে বিস্তার লাভ করে। এটি গিঁটে গিঁটে বা ডগায় ডগায় সাজানো একটি লতা জাতীয় শাক।

পুষ্টি উপাদান:
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, বিডি হেলথ ও স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েবসাইট রোদ্দুর ডট কমের নিবন্ধে বলা হয়েছে, রসালো গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ননিয়া শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া এতে আছে- ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, এবং ভিটামিন-সি। এই শাকে আরও আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং আয়রন। এই শাকের পাতায় রয়েছে কার্বোঅক্সালিক এসিড, অক্সালিক এসিড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, থাইয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যারোটিনসহ অন্যান্য প্রেেয়াজনীয় উপাদান।

ঔষধি গুণাগুণ:
পুষ্টিবিদ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, ননিয়া শাক লিভার, কিডনি ও হৃদরোগ নিরাময়ে বিশেষ ভাবে উপকারী। এছাড়া এটি ডায়াবেটিস ও অ্যাজমা রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভাবে কার্যকরী।

উপকারিতা:
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধে বলা হয়েছে, ননিয়া শাক-

ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে: নোনতা স্বাদের ননিয়া শাক ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রাকৃতিক ভাবে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে খেতে পারেন এই শাক।

দাঁত ভালো রাখে: দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। যা ননিয়া শাকে পর্যাপ্ত রয়েছে।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে: যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন, তারা কয়েকদিন নিয়মিত এই শাক খেতে পারেন। এতে পেটের সমস্যা দূর হবে। কারণ এতে রয়েছে আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।

পাকস্থলি ভালো রাখে: ননিয়া শাকে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পাকস্থলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: এই শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, যা চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

রুচি বৃদ্ধি করে: মুখের অরুচিভাব দূর করতে ননিয়া শাক খুব উপকারি। এটি জিহ্বায় জমে থাকা স্তর দূর করে। ফলে জিভে স্বাদ ফিরে আসে।

হজমশক্তি বাড়ায়: ননিয়া শাকে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ। এই উপাদানটি দেহের মেটাবলিজম ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধী নানা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ফলে নিয়মিত এটি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

চোখের সুরক্ষায়: এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, যা চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

রক্ত পরিশোধন করে: এই শাকের পাতা ও ডাঁটা রস করে নিয়মিত পান করলে রক্ত পরিশোধন হয়। এতে রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর উপাদান মলমূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র- বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও রোদ্দুর ডট কম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here